নামের কারণে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হচ্ছে মানুষ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। দেশের সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই কমিশন মানবাধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’ একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। এই এনজিওটি নামের সঙ্গে ‘কমিশন’ শব্দটি যুক্ত করায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিভ্রান্তি। মানবাধিকার লংঘনের শিকার অনেক ভুক্তভোগী প্রায়শই নামের কারণে বিভ্রান্তিতে পড়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিবর্তে এদের দ্বারস্থ হয়  প্রতিকার পাওয়ার জন্য। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে বেসরকারি এই সংস্থার নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও তারা তাতে ভ্রুক্ষেপ করছে না। ঐ নামেই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় প্রতারিত হচ্ছে দেশের সহজ-সরল মানুষগুলো। এনজিওটির মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম দিলদার।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলছে, ঐ এনজিওটির নাম তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিল থাকায় এবং তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদেরকে মানবাধিকার কমিশনের ‘চেয়ারম্যান’, ‘গভর্নর’, ‘সদস্য’ ইত্যাদি পরিচয় দেওয়ায় এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে পতাকা ও মনোগ্রাম ব্যবহার করায় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে ওটাকেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

এদিকে বেসরকারি এই সংস্থার সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৩ হাজারের ওপর শাখা রয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষই নন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নামের এই এনজিওকে সরকারের সংস্থা মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেক সরকারি কর্মকর্তাসহ কূটনীতিকরাও। নামের এই বিভ্রান্তির কারণে চলতি বছর অভিবাসন সংক্রান্ত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিবর্তে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই এনজিওটিকে। তারা ঐ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান/পরিস্থিতিকে বিশ্ববাসীর সামনে ভুলভাবে উপস্থাপন করায় ক্ষুণ্ন করা হয় দেশের ভাবমূর্তি।

সম্প্রতি এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে, মানবাধিকার রক্ষার নামে যে সব এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মানুষকে হয়রানি করে বা অর্থ আদায় করে থাকে সে সব সংস্থার বিষয়ে মাঠ প্রশাসনের কড়া নজরদারি প্রয়োজন। কোনো এনজিও ‘মানবাধিকার কমিশন’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ চিঠি দেওয়া হয়। ‘কমিশন’ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা :এদিকে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের’ নামের সঙ্গে ‘কমিশন’ শব্দ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের ঐ আদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

বিভ্রান্ত আন্তর্জাতিক মহলও :কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি অভিবাসন সংক্রান্ত জাতিসংঘের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহ থেকে মোট ৮২ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে। আয়োজক সংস্থা ভুল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্থলে ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’ নামের এই এনজিওকে নিমন্ত্রণপত্র পাঠায়। উক্ত সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র নামক একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যমতে, এই এনজিওটি অভিবাসন সংক্রান্ত বাংলাদেশের অবস্থান/পরিস্থিতিকে বিশ্ববাসীর সামনে ভুলভাবে উপস্থাপন করে।

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর